তাহাজ্জুদ নামাজ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদত, যা গভীর রাতে আদায় করা হয়। এটি আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের একটি বিশেষ মাধ্যম। এই প্রবন্ধে, আমরা ২৫ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে তাহাজ্জুদ নামাজের সময়সূচি, এর গুরুত্ব, আদায়ের পদ্ধতি এবং প্রাসঙ্গিক প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করব।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়সূচি
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় ইশা নামাজের পর থেকে ফজর নামাজের পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তবে, সর্বোত্তম সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ২৫ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে তাহাজ্জুদ নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ:
- ঢাকা:
- ইশা নামাজ: রাত ৭:৩০ PM
- ফজর নামাজ: ভোর ৪:৩৪ AM
- তাহাজ্জুদ সময়: রাত ১:৩০ AM থেকে ভোর ৪:৩৪ AM পর্যন্ত
- চট্টগ্রাম:
- ইশা নামাজ: রাত ৭:২৫ PM
- ফজর নামাজ: ভোর ৪:২৮ AM
- তাহাজ্জুদ সময়: রাত ১:২৫ AM থেকে ভোর ৪:২৮ AM পর্যন্ত
- রাজশাহী:
- ইশা নামাজ: রাত ৭:৩৫ PM
- ফজর নামাজ: ভোর ৪:৩৮ AM
- তাহাজ্জুদ সময়: রাত ১:৩৫ AM থেকে ভোর ৪:৩৮ AM পর্যন্ত
- খুলনা:
- ইশা নামাজ: রাত ৭:৩০ PM
- ফজর নামাজ: ভোর ৪:৩২ AM
- তাহাজ্জুদ সময়: রাত ১:৩০ AM থেকে ভোর ৪:৩২ AM পর্যন্ত
- সিলেট:
- ইশা নামাজ: রাত ৭:২০ PM
- ফজর নামাজ: ভোর ৪:২৫ AM
- তাহাজ্জুদ সময়: রাত ১:২০ AM থেকে ভোর ৪:২৫ AM পর্যন্ত
বিঃদ্রঃ উপরোক্ত সময়সূচি বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগৃহীত এবং স্থানভেদে কিছুটা পার্থক্য হতে পারে। তাই স্থানীয় মসজিদের সময়সূচি অনুসরণ করা উচিত।
তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব
তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুরআনে বলেন:
“আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়ুন, এটা আপনার জন্য অতিরিক্ত; হয়তো আপনার প্রতিপালক আপনাকে প্রশংসিত অবস্থানে উন্নীত করবেন।” (সূরা আল-ইসরা: ৭৯)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“রাতের নামাজের মধ্যে সর্বোত্তম হল তাহাজ্জুদ নামাজ।” (সহিহ মুসলিম)
তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত সংখ্যা
তাহাজ্জুদ নামাজের নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যা নেই; এটি ২ রাকাত থেকে ৮ বা ১২ রাকাত পর্যন্ত আদায় করা যায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাধারণত ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। তবে, ব্যক্তির সামর্থ্য ও সময় অনুযায়ী রাকাত সংখ্যা নির্ধারণ করা যায়।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত ও পদ্ধতি
নিয়ত: “আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাহাজ্জুদ নামাজের ২ রাকাত আদায় করছি।”
পদ্ধতি:
- সাধারণ নামাজের মতোই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা হয়।
- প্রতিটি ২ রাকাত শেষে সালাম ফিরিয়ে নতুন করে নিয়ত করে আবার ২ রাকাত আদায় করা হয়।
- তাহাজ্জুদ নামাজের পর আল্লাহর প্রশংসা, দোয়া ও ইস্তেগফার করা উত্তম।
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
- আল্লাহর নৈকট্য অর্জন: রাতের নির্জনতায় আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হয়।
- গুনাহ মাফ: তাহাজ্জুদ নামাজ গুনাহ মাফের মাধ্যম।
- দোয়া কবুলের সময়: রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দোয়া কবুল হয়।
- আত্মশুদ্ধি: নফসের পরিশুদ্ধি ও আত্মার প্রশান্তি লাভ হয়।
প্রাসঙ্গিক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১: তাহাজ্জুদ নামাজ কি ফরজ না নফল?
উত্তর: তাহাজ্জুদ নামাজ নফল ইবাদত। এটি ফরজ নয়, তবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
প্রশ্ন ২: তাহাজ্জুদ নামাজ কি ঘুম থেকে উঠে আদায় করতে হয়?
উত্তর: হ্যাঁ, এটি আদায়ের উত্তম পদ্ধতি হলো ইশার নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ ঘুমানো এবং তারপর উঠে তাহাজ্জুদ পড়া। তবে কেউ যদি ঘুমাতে না পারে, তবুও ইশার পর থেকে ফজরের আগে তাহাজ্জুদ আদায় করতে পারে।
প্রশ্ন ৩: তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার পর কি বিতর নামাজ পড়তে হবে?
উত্তর: যদি বিতর নামাজ ইশার পর পড়া না হয়, তাহলে তাহাজ্জুদের পর পড়া উত্তম। রাসূল (সাঃ) বিতর নামাজকে রাতের শেষ নামাজ হিসেবে আদায় করতেন।
প্রশ্ন ৪: তাহাজ্জুদ নামাজে কতটুকু কিরাত (সূরা) পড়া উত্তম?
উত্তর: দীর্ঘ কিরাত বা সূরা পড়া উত্তম। সাহাবায়ে কেরামরা তাহাজ্জুদের নামাজে দীর্ঘ সময় ধরে কুরআন পাঠ করতেন। তবে কারও যদি কিরাত কম জানাও থাকে, তাহলেও ছোট সূরাগুলো পড়ে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
প্রশ্ন ৫: যদি ঘুম ভেঙে না ওঠা যায়, তাহাজ্জুদের সওয়াব পাওয়া যাবে?
উত্তর: যারা নিয়ত করে ঘুমান কিন্তু ঘুম ভেঙে না ওঠেন, তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা নিয়তের উপরেও সওয়াব প্রদান করেন (হাদিস সূত্রে প্রমাণিত)।
প্রশ্ন ৬: মহিলারা কি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারবেন?
উত্তর: অবশ্যই। মহিলারা ঘরে একাকী তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারেন। এটি তাদের জন্যও সমান ফজিলতের ইবাদত।
প্রশ্ন ৭: তাহাজ্জুদ নামাজ কি প্রতিদিন আদায় করতে হবে?
উত্তর: এটি ফরজ নয়, তাই বাধ্যতামূলকও নয়। তবে নিয়মিত আদায়ের চেষ্টা করা উচিত, কারণ এটি একটি বিশেষ নফল ইবাদত এবং রাসূল (সাঃ) এর অভ্যাস ছিল।
তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- রাতের ঘুম ঠিক রাখুন: খুব দেরি করে না ঘুমিয়ে ইশার পরপর ঘুমানো উত্তম। এতে রাতের শেষ ভাগে ওঠা সহজ হয়।
- অ্যালার্ম ব্যবহার করুন: ঘুম ভাঙানোর জন্য বিশ্বস্ত অ্যালার্ম বা পরিবারের কাউকে বলুন।
- নিয়মিত অভ্যাস করুন: শুরুতে ২ রাকাত নিয়মিত পড়ার চেষ্টা করুন। ধীরে ধীরে রাকাত বাড়ানো সহজ হবে।
- সালাতের পর মোনাজাত করুন: তাহাজ্জুদের পর গভীর মনোযোগ ও কান্না সহ দোয়া কবুল হওয়ার সময়।
উপসংহার
তাহাজ্জুদ নামাজ আল্লাহর রহমত লাভের এক অনন্য সুযোগ। এটি নিঃসন্দেহে মুমিনের আত্মার প্রশান্তির উৎস। বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন চারিদিকে নিস্তব্ধতা, তখন একজন বান্দা নিজের রবের দরবারে দাঁড়িয়ে মনের কথা বলতে পারে, ক্ষমা চাইতে পারে, জীবন গঠনের দিকনির্দেশনা চাইতে পারে।
২৫ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশের সকল মুসলমানদের প্রতি আহ্বান – আসুন, সেই রাতে অন্তত ২ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়ি, রবের কাছে দাঁড়াই, এবং আমাদের জীবনে আলোর সঞ্চার ঘটাই।